আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

সম্পাদকীয়ঃ অগ্রহায়ণ-পৌষ সংখ্যা, ১৪২১ // পবিত্র আচার্য্য

                             মরা এমন এক দেশের, যার ইতিহাস সুপ্রাচীন। তাঁর গৌরবগাঁথা পৃথিবীর যেকোনো দেশকে টেক্কা দিতে পারে। সমাজ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান সর্বব্যাপী এর বিজয়দ্রুতি প্রথিত। এই দেশ আধ্যাত্মিকতার চারণভূমি। সহিষ্ণুতা, উদারতা আর মিলনমুখরতা দেশের পরতে পরতে বিদ্যমান। আমরা ভারতবাসী। সারা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরা গর্বিত এই দেশের জেনে। 

এতসব গৌরবগাঁথার মধ্যেও বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কতিপয় অন্ধগলি। জঙ্গি গোষ্ঠি। আমার দেশ কখনও কোনদিন এইসব প্রতিষ্ঠানের মান্যতা দেয়নি। আর দেওয়ার প্রশ্নও ওঠেনা কোন ভাবেই। কঠোর হাতে এদের দমনে যারপরনাই তৎপর। এতসব প্রচেষ্টার মধ্যেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি এইসব জঙ্গি ক্রিয়াকলাপ। শান্তিপ্রিয় ভারতবাসীকে এইসব জঙ্গি গোষ্ঠীর বর্বরতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। রক্তগঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে নীরিহ প্রাণ। 

সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বড়ো জঙ্গিদের একটা গোষ্ঠীর নির্মম হামলায় নিহতের সংখ্যা অন্তত সত্তরের কাছাকাছি। যাদের একটা বড় অংশ মহিলা এবং শিশু। সন্ধ্যা নাগাদ তাদের বস্তিতে হামলা চালিয়ে এনডিএফবি (সংবিজিৎ)গোষ্ঠীর জঙ্গিরা আদিবাসী শ্রমিক পরিবারগুলোর নারী-শিশু-পুরুষদের বাড়ি থেকে বের করে আনে, তারপর সার বেঁধে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এই নির্বিচারে চালানো নারকীয় হত্যাযজ্ঞে একটি বারের জন্যেও হাত কাঁপেনি এই নৃশংস মানুষগুলোর। এরা কোন সভ্যতায় বড় হয়েছে? জঙ্গলের হিংস্র পশুগুলোর চাইতেও এরা নিষ্ঠুর। 

আসামে আক্রান্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবশ্য জানিয়েছেন সামরিক পথেই সরকার এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করবে। মিঃ সিং বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এটা পরিষ্কার এটা নিছক একটা জঙ্গি তৎপরতা নয় বরং এ হল পরিষ্কার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ফলে সন্ত্রাসবাদীদের যেরকম জবাব প্রাপ্য সরকার তেমনই জবাব দেবে।"  

রাজ্যে অবশ্য ইতিমধ্যেই পাল্টা প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে আদিবাসীদের পাল্টা হামলায় দুজন বোড়ো মারা গেছেন, প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলি চালনাতেও প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিনজন। এই মারণমুখী ধ্বংসলীলা শান্তি ভূমিতে কেন ঘটছে

আরেকটি ভয়াবহ জঙ্গি কর্মকাণ্ড ঘটে গেছে আমাদেরই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে। গত ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে পাকিস্তানি তালেবানদের হামলায় ১৪০ জনেরও বেশি শিশু নিহত হয়। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনার নিরিখে এর সামনাসামনি হতে পারবে না আর কোন ঘটনা। 

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে ধর্মীয় জাতীয়তা বোধকে ভিত্তি করে। অবশ্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সেক্যুলার মহল ক্ষমতাসীন থাকলেও তারা নানাভাবে বিভিন্ন কারণে ও বিভিন্ন উপায়ে টিকে থাকার নিমিত্তে ধর্মীয় লেবাস শুধু পরিধানই করেনি এরসাথে তারা সময় অসময়ে সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইসলামী চরমপন্থিদের! আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের জন্য। শুধু তাই নয় পাকিস্তানের এখন টিকে থাকার প্রশ্ন এসে গেছে! এই দেশ এত দিনেও বুঝতে শিখল না জঙ্গিদের মদত দানে কোন দেশের পক্ষেই মঙ্গল হতে পারেনা। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষে এখন এদেরই হাতে দংশিত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

 জঙ্গিরা নিঃসন্দেহে বিশ্ব মানবতার শত্রু, প্রতিটি মানুষের শত্রু। যেকোনো সদর্থক সৃষ্টিশীল ভাবনাই যেন এদের হত্যার তালিকার মধ্যে পড়ে। আফিগানিস্থান জঙ্গিদের আঁতুড় ঘর হলেও একে লালিত পালিতে করেছে পাকিস্তান। আজ সেই জঙ্গিরা ফ্রাঙ্কেস্টাইন হয়ে খোদ পাকিস্তানকে গ্রাস করছে। শুধু তাই নয় আফগানিস্তান পাকিস্তান পেরিয়ে জঙ্গিদের প্রজনন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ আফ্রিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলো তো যেন এখন জ্বলন্ত কড়াই। 

সুশাসন আর কঠোর পর্যবেক্ষণ এর মধ্যে জন প্রতিনিধিত্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠালে, মানুষের মধ্যে সুশিক্ষার বীজবপন করলে জঙ্গিবাদ বিস্তারের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে। এই বিস্তারকে বাড়তে না দিয়ে শুরুতেই সমূলে উৎখাত করতে পারলে দেশের মঙ্গল। জাতির মঙ্গল। 

এবারে শান্তির জন্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের দুইজন যৌথভাবে। এটি শ্রেষ্ঠ সম্মান। এর কথা মাথায় রেখেই দুই দেশ যৌথভাবে এগিয়ে আসুক। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক জঙ্গি গোষ্ঠী আর তার ক্রিয়াকলাপ ধ্বংস করার জন্যে। মানুষের স্বার্থপরতা, নীতি হীনতা, পৈশাচিক মনোভাবের আবর্জনা দূর করার কথা ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। এই দায়বদ্ধতা জনগণের। সরকারের। 

 সামনেই আসছে একটা নতুন বছর। সাদরে অভ্যর্থনা জানাই আমরা C/O সাহিত্যের সবাই মিলে। নতুন বছর আপনাদের সবার খুব ভাল কাটুক। এক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভারতের স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি?

                                             পবিত্র আচার্য্য
                                             ১১ই পৌষ,১৪২১


CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।